বিএনপি থেকে বাদ সাকার পরিবার!

১৯৭৯ থেকে ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের রাউজান, রাঙ্গুনিয়া ও ফটিকছড়ি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন সালাহউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী। মুসলিম লীগ, জাতীয় পার্টি ও এনডিপি ঘুরে সর্বশেষ তিনি এমপি হন বিএনপি থেকে। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বছর তিনেক আগে সাকার ফাঁসির দণ্ডাদেশ কার্যকর হয়েছে। এর পর থেকে সাকার আসনে তাঁর স্ত্রী ফারহাত কাদের চৌধুরী ও ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরীর নির্বাচন করার গুঞ্জন চলছিল। কিন্তু বিএনপির মনোনয়নপ্রাপ্তদের তালিকায় তাঁদের কাউকে পাওয়া যায়নি।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত দুই দিনে চট্টগ্রামের ১৬টি আসনেই মনোনয়নের চিঠি বিতরণ করেছে বিএনপি। সাকার আসনগুলোতে একাধিক মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনোটিতেই সাকা পরিবারের সদস্যদের নাম পাওয়া যায়নি। এমন পরিস্থিতিতে নানা গুঞ্জন ডানা মেলেছে। বিএনপি কি সাকা চৌধুরীর পরিবার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, নাকি সাকা চৌধুরীর পরিবারই নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী নয়—এমন নানা প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছে স্থানীয় লোকজন।

সাকার স্ত্রী-ছেলের বাইরে ভাই গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর নামও ছিল মনোনয়নের আলোচনায়। রাউজান ও রাঙ্গুনিয়া থেকে একাধিকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন গিয়াস। তিনি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বে আছেন। গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত তিনিও মনোনয়ন পাননি। তবে গিয়াস কাদেরের ছেলে সামির কাদের চৌধুরীকে চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। সামির বর্তমানে কারাগারে আছেন।

সাকা চৌধুরী ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া-বোয়ালখালীর একাংশ) ও চট্টগ্রাম-৬ (রাউজানের) আসন থেকে মুসলিম লীগের এমপি নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৮৬ সালে চট্টগ্রাম-৬ আসনে এমপি হন জাতীয় পার্টির ব্যানারে। আর ১৯৯১ সালে এমপি হন এনডিপি থেকে। এরপর ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে চট্টগ্রাম-৭ আসনে এমপি হন বিএনপির টিকিটে।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে এই আসনের পাশাপাশি চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসন থেকেও নির্বাচন করেন সাকা। এর মধ্যে রাঙ্গুনিয়ায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী ড. হাছান মাহমুদের কাছে পরাজিত হলেও ফটিকছড়ি থেকে তিনি জয়ী হন। রাঙ্গুনিয়ায় এবার উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আহমেদ হাসনাত, উপজেলা বিএনপির নেতা শওকত আলী নূর ও কুতুবউদ্দিন বাহার দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন।

জানতে চাইলে আবু আহমেদ হাসনাত গতকাল বিকেলে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আজকে (গতকাল) আমি মনোনয়নের চিঠি পেয়েছি। আরো দুজন এ আসন থেকে মনোনয়নের চিঠি পেয়েছেন। এ আসনটির জন্য মনোনয়নপত্র নিয়েছিলেন সাবেক এমপি গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী।’

চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) থেকে সর্বশেষ বিএনপির টিকিটে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন সাকা চৌধুরী। তিনি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন। এ আসনে গতকাল পর্যন্ত দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম আকবর খোন্দকার, উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ডা. খুরশিদ জামিল চৌধুরী।

জানতে চাইলে খুরশিদ জামিল চৌধুরী বলেন, ‘আমি আজকে (গতকাল) দলীয় মনোনয়নের চিঠি পেয়েছি। এ আসনটি বিএনপির। এখান থেকে আমাদের দলীয় প্রার্থীরাই বেশির ভাগ নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী এ আসন থেকে ২০০৮ সালে এমপি হয়েছিলেন।’

গতকাল চেষ্টা করেও সাকার স্ত্রী ফারহাত কাদের চৌধুরী ও ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।